খণ্ড-১
- মূল তিন হোতার দু’জন অবসরে ও একজন চির অবসরে
- ঝড়ে ‘আম কুড়ানো’বাকী হোতারা -‘ইয়া নাফসি’
- জালিয়তি কর্মচারীরা ও তদবির হোতা ‘ধোয়া তুলসি’
- সাংবাদিক নামধারী বখরাবাজদের বেড়া এখনো ভাঙ্গেনি
কামরুজ্জমান মিল্টন:
সাম্প্রতিক সময়ের রকমফেরে অন্যান্য অনেকের সাথে বিআরটিএ’র বরাবরের নির্বিঘ্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ঝড়ে ‘আম কুড়ানো’শ্রেণী ভেদের হোতাদের বেশীরভাগই হয়তো ‘ইয়া নাফসি’ জবছেন। আর নিরবে গা বাচানোর কৌশল বাতলাচ্ছেন। তবে দীর্ঘদিনের বহুল আলোচিত-সমালোচিত ফের নতুনভাবে খণ্ড প্রতিবেদনের খণ্ডটি উপস্থাপনের বিষয়টিও মনে হয় এ সময়ের সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তা হলো- কোটার মধ্যে কোটা। অর্থাৎ খোদ কোটা জালিয়াতির সেই কর্মচারীরা এখনো রয়েছেন-বহালতবিয়্যতে। ওই সেই কথা “সর্বাঙ্গের ব্যথায়,মলম দিবে কোথায়” প্রাসঙ্গিক এ মন্তব্যটি অন্য কারো নয়,খোদ সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিআরটিএ’রই জনৈক কর্মকর্তার। যা বিআরটিএ’র অনিয়ম-দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের জবাবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে,আক্ষেপের সাথেই বলেছিলেন। বছর খানেকেরও বেশী আগে সেই থেকে ‘বিআরটিএ’র বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের সাথে খোদ হেড অফিস,অর্থাৎ-সদর কার্যালয়ের তৎকালিন এডি-এডমিন (সহকারী পরিচালক-প্রশাসন) রিয়াজুর ওরফে রেজাউর রহমান শাহিন ও তার লালিত চক্রের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমানের সময় থেকে শুরু করে নুর মোহাম্মদ মজুমদার পর্যন্ত ওই এডি-এডমিনের তত্বাবধায়নে গঠিত অনিয়ম-দুর্নীতির নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। সেই সাথে তার কোটা জালিয়াতির নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু বিষয় সামনে আসে। বিগত দুই মেয়াদের দুই সাবেক চেয়ারম্যানের আমলের মধ্যে মশিউর রহমান ও এডি-এডমিনের তৈরী লুটপাটের ঝড়ে ‘আম কুড়ানো’র সুযোগে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই আখের গুছিয়ে শঙ্কা সমেত নিরবে বহাল। যদিও দুই চেয়ারম্যান-মশিউর রহমান ও নুর মোহাম্মদ মজুমদার অবসরে তাদের ওই নিরাপদে স্তুপাকৃত বিত্তবৈভবে মহাস্বাচ্ছন্দে রয়েছেন। তবে ওই সময় এসব বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া, মানে-প্রতিবেদনের জেরে ক্ষেপে উঠে জালিয়াতির নিয়োগপ্রাপ্ত আবু তাহের, মোঃ ফোরকান,কবির হোসেনসহ ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ,বদলিসহ হরেক দুর্নীতির ম্যানেজার আলমগীরসহ তাদের বস এডি-এডমিন সিন্ডিকেটটি।আর এর একপর্যায়ে চলে দমানোর নানা চক্রান্ত। এরই মধ্যে প্রতিবেদনগুলো একে একে কপি পেস্টে ছড়িয়ে পড়ে। আর তাদের দাবিকৃত অজ্ঞাত-অখ্যাত অন-লাইনসহ একাধিক দৈনিক পত্রিকায় হুবহু ছাপা হতে থাকে।
সেখানেও একই অবস্থা চললে ওই সব পত্রিকার কেউ কেউ (প্রতিবেদক) ক্ষুব্ধ হয়ে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে পেপার কাটিং জমা দিয়ে তদন্তের দাবি করেন। ফলে বেশ দেরিতে হলেও সাংবাদিক নামধারী চাটুকারদের বেড়ার ফাক কোটা জালিয়াতির নিয়োগের বিষয়টি আমলে নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর এতে পুরো ‘বিআরটিএ’তে এক ধরনের নাড়া পড়ে। কিন্তু এসবের সাথে জড়িত সন্দেহে ওই চক্রের হয়রানির শিকার হয় একাধিক সংবাদকর্মী। এমন কি,তথ্য পাচারের অভিযোগে একাধিক কর্মচারীকে পেতে হয় শাস্তি। একটা লম্বা সময় ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তৎকালীন এডি-এডমিন গড়েন নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ। তার সাথে ওই কর্মচারীরাও সাধ্যমত সুযোগ হাতছাড়া করেননি। পদ-পদবি গাড়ি চালক হলেও প্রত্যেকের রয়েছে-জ্ঞাত আয় বহির্ভুত ও বিস্মিত হওয়ার মত সম্পদ। মশিউর রহমান পরবর্তী চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সময় পর্যন্ত চলে তাদের এসব অপকর্ম। এসব নানা অভিযোগের পসরা থেকে এডি-এডমিন ও গাড়ি চালক আবু তাহের, মোঃ ফোরকান,কবির হোসেন ও আলমগীরের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনসহ কোটা জালিয়াতির বিষয়টি সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের তদন্ত পর্যন্ত গড়ায়। ওই এডি-এডমিনকে অন্য শাখায় বদলি করে নবাব ফাহমে আজিজ খান নামের একজনকে বসানো হয়। সেই সাথে চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার দপ্তরিক তদন্ত বসিয়ে সাজিদ আনোয়ার নামের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেড মাধ্যমে প্রতিবেদন দিয়ে এদের দায়মুক্তি দেন। এর মধ্য দিয়ে অন্য বিষয়গুলো এক ধরনের ধামাচাপা পড়ে যায়। যাতে ছিল-তৎকালিন চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার,পরিচালক প্রশাসন আজিজুল ইসলাম ও এডি-এডমিনের প্রত্যক্ষ মদদ। তবে গেল কয়েক মাস আগে ওই এডি-এডমিনের আকস্মিক মৃত্যু হয়।
ওই সময় আবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের একটি সূত্র থেকে জানা যায়,কোটা জালিয়াতির নিয়োগপ্রাপ্ত গাড়িচালক-আবু তাহের, মোঃ ফোরকান,কবির ও আলমগীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়গুলো তদন্তাধীন রয়েছে। কিন্তু এরপর একটা লম্বা সময় পার হয়ে যায়। এখনও বিষয়গুলো তদন্তাধীন রয়েছে, না ময়লার ঝুড়িতে জায়গা পেয়েছে ? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে খেতে নিথর হয়ে পড়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। কারণ বরাবরই চক্রটির ছিল-গতানুগতিক প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা। তবে সদ্য দেশের হাল পরিবর্তনে এযাবতের তাদের অবৈধ উপয়ে গোছানো আখেরে যে কোন ধরনের বদ-নজরের আশঙ্কায়ও তারা ভুগছেন বলে খবর ছড়াচ্ছে। আর এসব বিষয়ে একাধিকবার তৎকালিন চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের কাছ থেকে নানা বিরুপ মন্তব্য আসেেলও বর্তমান অবস্থায় বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে এ ব্যাপারে নতুন করে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ দুদক সুত্র জানায়, বর্তমান অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে কোন ছাড় নাই। শুধু সময় সাপেক্ষ।
বলা দরকার-কোটা জালিয়াতির ওই সব কর্মচারী বেশীর ভাগই ছিল‘বিআরটিএ’রই কোন না কোন কর্মকর্তার বাসার কাজের লোক। ওই সময়ই তৎকালীন চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, এডি-এডমিন শাহিন ও বেশ কয়েকজন যোগসাজশে কোটা বানিয়ে ১০-১২ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে তাদের চাকরি দেন। এ যাবৎ ওই জালিয়াতির নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী সিণ্ডিকেট তার পরের চেয়ারম্যান ওই এডি-এডমিনের দেখভালে ছিলেন অনেকটা বেপরোয়া। আর সে সুযোগে প্রত্যেকেই বনে গেছেনে-অকল্পনীয় সম্পদের মালিক। কিন্তু এডি-এডমিনের না থাকায় তারা যেন অনেকটা ছায়াহীন হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে এ যাবৎ নির্বিঘ্নে মহা আয়াশে আশ-পাশের বড়,মাঝারি,ছোটসহ সব ক্ষমতাধর লুটেরাদের যোগাড়ির করে তাদের অর্জিত অকল্পনীয় সম্পদ, মানে-কারো ডুপ্লেক্স, কারো রাজদরবার,স্বর্ণকোমল,কারো-ভিআইপি মার্কেট,বাড়ি,ফ্ল্যাট,প্লট সামলানোর নানা ভেজালের আশঙ্কায়ও রয়েছেন চলমান-এ কোটা সংস্কারের ঝড়ো হাওয়ায়।