শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কোটিপতি ড্রাইভার সাইফুল চালাচ্ছে মোল্লা বনাজী, জনস্বাস্থ্যে হুমকি   * রসায়নে নোবেল পেলেন গুগলের দুই বিজ্ঞানীসহ ৩ জন   * ১৪ বছরে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ৫০ হাজার কোটি টাকা   * আ. লীগ শাসনামলে চরফ্যাশন-মনপুরার ত্রাসের সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন জ্যাকব   * সম্পদের নেশায় মজে থাকা পুলিশের ডিআইজি জামিল   * নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ: জামায়াতের আমির   * কৃষি মন্ত্রণালয়, বিএডিসির কারসাজি ॥ ৯৫০ টাকার সার কৃষক কিনছে ১৩৫০ টাকায়   * শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে জাতীয় নাগরিক কমিটির অভিযোগ   * দুর্বল ৪ ব্যাংক পেলো ৯৪৫ কোটি টাকা   * শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সহ গ্রেপ্তার ৪  

   রাজনীতি
আ. লীগ শাসনামলে চরফ্যাশন-মনপুরার ত্রাসের সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন জ্যাকব
  Date : 09-10-2024
Share Button

শাহাবুদ্দীন আহমদ, চরফ্যাশন প্রতিনিধি, ভোলাঃ

ভোলা-৪ চরফ্যাশন-মনপুরা আসনের আ. লীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিগত সারে পনের বছর ছিলেন এ অন্চলের ত্রাসের রাজত্বের একচ্ছত্র সম্রাট। পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইশারায় বাংলাদেশ চললেও অধ্যক্ষ নজরুলের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সাম্রাজ্য চরফ্যাশন - মনপুরা চলেছে আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবে ইশারায়। জ্যাকবের কথা, কাজ, ইশারাই ছিলো চরফ্যাশন মনপুরার মানুষের জন্য আইন। বিগত সারে পনের বছর ভোলা-৪ আসন ছিলো সাবেক এই দাপটে এমপির হাতে জিম্মি। বিরোধীদের দমন-পীড়ন, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে অপরাধের নিরাপদ স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিলেন জ্যাকব। খুন, ধর্ষণ, হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মসহ এমন কিছু নেই যা জ্যাকবের নেতৃত্বে তার দলীয় নেতা-কর্মীরা করেনি। চরফ্যাশন ও মনপুরায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছিল জ্যাকব আতঙ্ক।

এমপি জ্যাকবের বিরুদ্ধে রয়েছে কমিশন বাণিজ্য ও অনিয়ম-দুর্নীতির বহু অভিযোগ। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। তারা লিখিত অভিযোগে জানান, সাবেক এমপি জ্যাকব ও তার লোকজন ভোলার ঠিকাদারদের চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় উন্নয়নকাজ করতে বাধা দেন। কাজ করতে হলে জ্যাকবের লোকজনকে ২০ শতাংশ কমিশন দিয়ে গ্রিনকার্ড নিতে হয়। এই সমস্যার সমাধান করা না হলে তারা লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই সময়ে। তারা সংবাদ সম্মেলনে জ্যাকবের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরেছিলেন।
চরফ্যাশন - মনপুরার যে কোন উন্নয়ন কাজ ছিলো জ্যাকবের নিয়ন্ত্রণে। ধার্যকৃত অংকের কমিশন দেয়া না হলে তার এলাকায় উন্নয়ন কাজ করা ছিলো অসম্ভব। ঠিকাদার রুহুল আমিন বলেন, ভোলার ঠিকাদারেরা চরফ্যাশন-মনপুরায় প্রায় ৩০টি সড়ক সংস্কার ও নির্মাণকাজ পেয়েছেন। কাজের দর প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ভোলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারকে লিখিতভাবে কার্যাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি এসব কাজের কার্যাদেশ দিয়েছেন ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তবে মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রকৌশলীরা ঠিকাদারদের কাজের সাইট বুঝিয়ে দেননি। উপজেলা প্রকৌশলীরা কাজ বুঝিয়ে দেয়ার নামে নানা ছলচাতুরী করে বলছেন, জ্যাকব কাজ বুঝিয়ে দিতে বললেই বুঝিয়ে দেয়া হবে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- মেসার্স জুলফিকার আহমেদ, তহুরা এন্টারপ্রাইজ, উর্মি এন্টারপ্রাইজ, ইলিয়াছ এন্টারপ্রাইজ, ইলি এন্টারপ্রাইজ, হাওলাদার কনস্ট্রাকশন, জেরিন অ্যান্ড কোং, হায়দার বিল্ডার্স, মেসার্স জাহাঙ্গীর আলম, এসএস ট্রেডিং, ক্ল্যাসিক্যাল এন্টারপ্রাইজসহ ২৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২০ জন ঠিকাদার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে তৎকালীন ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, কাজের টেন্ডার হয়েছে। ১৫০ জন ঠিকাদারের মধ্যে লটারিতে একজন ঠিকাদার যখন কাজ পেয়েছেন তাকে কার্যাদেশ দিয়েছি। তাকে সাইট (লে আউট) বুঝিয়ে দেব এবং কাজের পরিবেশ তৈরি করব। এটাই আমাদের দায়িত্ব।
তবে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ওই সময় তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি-প্রমাণ নেই। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। একটি পক্ষ তার ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে চাচ্ছেন।
আওয়ামী সরকারের তিন মেয়াদে জ্যাকব নিজের নামে গড়ে তোলেন প্রয়াত বাবার নামে দক্ষিণ আইচা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজ, মায়ের নামে বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ, স্ত্রীর নামে নীলিমা জ্যাকব মহিলা কলেজসহ ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এমপিওভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানে দলীয় অযোগ্য কর্মীদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ব্যাক্তি নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সরকারী নীতিমালা লংঘন করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো তার ও তার আত্মীয় স্বজনদের নামে নাম করন করেছেন বলেও জানা যায়। কোন ব্যাক্তির নামে স্কুল বা কলেজের নাম নাম-করন করতে হলে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমান অনুদান প্রদান বাধ্যতামূলক যা প্রতিষ্ঠানের স্হায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকবে । জ্যাকব তার প্রভাব খাটিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদান না দিয়েই তার নিজ নামে, বাবা মায়ের ও স্ত্রীর নামে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাম-করন করেছেন বলেও জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চরফ্যাসন-মনপুরায় মোট ৪৪টি ইটভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি ১৮টি ইটভাটার ছাড়পত্র আছে। উপকূল ব্রিকস ও মনপুরা ব্রিকসসহ ২৬টি ইটভাটার কোন ছাড়পত্র নেই। জ্যাকব ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে থাকা এই ইটভাটাগুলোতে পুড়ছে সরকারি বনের গাছ। প্রতিটি ভাটায় দৈনিক গড়ে পোড়ানো হচ্ছে ২০ মে. টন অবৈধ কাঠ।
চরফ্যাসনের চর কলমি ইউনিয়নে দুই ছেলে জেনিক ও জেনিলের নামে ২০০ একর জমির উপর গড়েছেন দু’টি খামার করেছেন জ্যাকব।যেটি চরফ্যাশনে তথা ভোলা জেলায় খামার বাড়ী নামে পরিচিত। জেনিক ফিসারিজ ও জেনিল এগ্রো ফার্ম নামে এই দু’টি খামার দেখভাল করেন চর কলমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন। এছাড়াও চর নাংলায় এক দাগেই জ্যাকবের মালিকানাধীন রয়েছে ২০০ একর জমি। এই জমি দেখভাল করেন চর কলমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাওসার মাস্টার। এমপি হওয়ার আগে এসব সম্পদের কিছুই ছিল না জ্যাকবের। এ বিষয়ে জানতে কামাল ও কাওসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল চরফ্যাসনের চর মানিকা ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনের সামনে সরকারি বরাদ্দের ভিজিএফের চাল নিতে যান জেলেরা। ওজন করে দেখা যায়, নির্ধারিত ৪০ কেজির চেয়ে কম চাল দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন জেলে প্রতিবাদ করলে চর মানিকা ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ হাওলাদারের লোকজন হোসেন নামে এক জেলেকে মারধর করে। এসময় চাল মেপে পরীক্ষা করার জন্য তদারকি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের গায়ে হাত তোলেন ইউপি চেয়ারম্যান।’চরফ্যাসন ও মনপুরার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এমন আরও অনেক ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২ মাস ভোলার মেঘনা নদীর ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং তেতুঁলিয়ার ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তমের ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব মাছ শিকার বন্ধ থাকে। এ সময় মাছ শিকারে বিরত থাকা জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে চাল বিতরণ করা হয়।জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার দুই মাস কষ্টে থাকতে হয়। বিকল্প কাজ জোগাড় করতেও ব্যর্থ হন তারা। প্রণোদনা হিসাবে জনপ্রতি দুই মাসে ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে নিবন্ধিত জেলেদের সবাই পান না। যারা পান তাদেরকেও পরিমাণে কম দেওয়া হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ি, চরফ্যাসনের ১টি পৌরসভা, ২১টি ইউনিয়ন ও মনপুরা ৫টি ইউনিয়নে ৩৩ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জ্যাকবের কথায় চলতে হয়েছে। যারাই জ্যাকবের বিরুদ্ধে গেছেন তারা আ. লীগ পরিবারের হলেও আর কখনই জনপ্রতিনিধি হতে পারেননি। এমনটি জানিয়েছেন নুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান (তার বাবা আব্দুল আলী মাস্টার যাকে লালমোহন ও চরফ্যাশনের আ. লীগের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়, বৃহত্তর নুরাবাদ ইউপির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান ছিলেন, তার উদারতায় জ্যাকবের বাবা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম এমপি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন)। তিনি বলেন, জ্যাকবের বিরোধিতার কারণে নৌকা প্রতীক পেয়েও জিততে পারেননি তিনি। বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তার দেয়া তথ্যমতে, রাজধানীর ধানমন্ডিতে জ্যাকবের ৩টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আছে। গুলশানে বাড়ি কিনেছেন। গাজীপুরে ১৫০ একর জমির উপর রয়েছে খামার বাড়ি ও নরসিংদীতে তার শশুর বাড়ী এলাকায় রয়েছে ১০০ একর জমির উপর একটি মৎস্য খামার। এই খামার পরিচালনা করছেন তার স্ত্রী নিলীমা নিগার সুলতানা ও তার ভাইয়েরা।
জিন্নাগড় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মনজুর বলেন, টিআর, কাবিটা-কাবিখা, ভিজিএফ কর্মসূচি-যাদের জন্য বরাদ্দ তাদের বেশিরভাগই বঞ্চিত হয়েছেন। যখন চেয়ারম্যান ছিলাম জ্যাকবের নির্দেশেই কাজ করতে হয়েছে । ইউপি চেয়ারম্যান থাকার সময় এসব বলেননি কেন জানতে চাইলে মনজুর বলেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে তখন সাহস হয়নি। এ ছাড়া কাজী মন্জুরসহ বিএনপির সম্পদশালীদের পৈত্রিক সম্পত্তিসহ অন্যান্য সম্পদ দখলের অভিযোগ রয়েছে এমপি জ্যাকবের প্রতি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মনোয়ারা ট্রেডার্স, ইউনুছ আল মামুন, বকশী এন্টারপ্রাইজ, মিলন ট্রেডার্স, জসিম কনস্ট্রাকশন, হাওলাদার টেডার্স, উপকূল কনস্ট্রাকশন, মা ট্রেডার্স, গ্রামীন এন্টারপ্রাইজ, উপকূল ব্রিকস, কাইফ এন্টারপ্রাইজ, অটিবিএল, বিজেগ্রুপ, ওয়েস্টিন ইন্জিনিয়ারিং, ডন কর্পোরেশন, ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স, আরাধনা এন্টারপ্রাইজ, খন্দকার কন্সট্রাকশন-এই ১৮ প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে চরফ্যাসন ও মনপুরার ঠিকাদারি ব্যবসা। এর নেপথ্যে আছেন জ্যাকব, তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা।
২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চরফ্যাশন ও মনপুরা শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বাস্তবায়নকাল ছিল ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর তিন দফায় প্রকল্পটি সংশোধন হয়। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাড়ায় ১৬৮ কোটি টাকা। প্রকল্পে প্যাকেজ ছিল ২৯টি। এর মধ্যে ১৫টি ছিল ব্লক তৈরি ও ডাম্পিংয়ের কাজ। নদী ভাঙন ঠেকাতে দরপত্রে উন্নতমানের ব্লক তৈরির শর্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা শর্ত ভঙ্গ করে নিম্নমানের ব্লক তৈরি করে। ব্লক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিল ডন কর্পোরেশন, ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, আরাধনা এন্টারপ্রাইজ ও খন্দকার কন্সট্রাকশন। প্রমাণ থাকার পরও নিম্নমানের ব্লকের বিল পরিশোধ হয়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, টাস্কফোর্স এবং বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-আইএমইডি‘র প্রতিবেদনে প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ আছে। মন্ত্রণালয় ও টাস্কফোর্সে সে সময় কর্মরত ছিলেন এমন দু’জন কর্মকর্তা জানান, পাউবো’র কর্মকর্তারা জ্যাকবের নির্দেশে ঠিকানাদারদের বিল পরিশোধ করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, চরফ্যাসন ও মনপুরায় মেঘনার ভাঙন রোধে চরফ্যাশন ও মনপুরায় ১ হাজার ৯২ কোটি ৭০ লাখ টাকার কাজ চলছে। এর মধ্যে মনপুরায় ১ হাজার ১৫ কোটি ৭০ লাখ ও চরফ্যাসনের মুজিবনগর ইউনিয়নের ভাঙন রোধে ৭৭ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয় গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি। বন্যা, জোয়ার ভাটা, বর্ষাকালে প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি হতে জনসাধারণের জানমাল রক্ষা এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙ্গনরোধ, নদী ড্রেজিং, সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূর করা ও ভূমি পূনঃউদ্ধার এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পের ২৫টি প্যাকেজ কাজের মধ্যে ১২টি প্যাকেজের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। বাকী কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় একক আধিপত্য ছিলো জ্যাকবের। তার সহযোগিতায় আছেন জ্যাকবের ভাই জাহিদুল ইসলাম সৌরভ, ভাতিজা তরিকুল ইসলাম শরীফ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের সব জেলায় ই-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ঠিকাদার রেজিস্ট্রেশন, টেন্ডার আহ্বান, দাখিল, টেন্ডার খোলা, তার মূল্যায়ন, অনুমোদন এবং কার্যাদেশ দেওয়াসহ টেন্ডার সংক্রান্ত সবরকম কাজ হচ্ছে। শুধু চরফ্যাসন ও মনপুরায় ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি মানা হতো না।
২০০৮ সালে ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ টাকার কম। এরপর তিনবার সংসদ সদস্য ও একবার উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৫ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় ১৭০ গুণ বেড়ে তিন টাকা কোটি ছাড়িয়েছে।
২০০৮ সালে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ফ্ল্যাট ও বাড়ি ছাড়া কোনো স্থাবর সম্পদ না থাকলেও এখন ওই ফ্ল্যাট-বাড়ির সঙ্গে তাঁর আরও প্রায় পৌনে ১৫ কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে। একই সময়ে তাঁর স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সোয়া তিন কোটির বেশি।
পেশায় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ভোলা-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা এবং নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া তার হলফনামায় তিনি একজন আমদানি রফতানি কারক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে তিনি কি আমদানি করেছেন আর কি রফতানি করেছেন এমন কোন তথ্য খুজে পাওয়া যায় নি। এছাড়া মধুমতি ব্যাংকের তিনি একজন স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার। যা তিনি হলফনামায় তা উল্লেখ করেছেন। চরফ্যাশন মধুমতি ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে তার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ছিলো বলে মনে করেছেন অনেকে।
হলফনামা বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বার্ষিক আয় ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ৫ বছর পর ২০১৩ সালে তাঁর আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ১৯ টাকায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় আয় কিছুটা কমলেও এবার তিনি ৩ কোটি ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৯ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অর্থাৎ ১৫ বছরে তাঁর বেড়েছে ১৭০ গুণের বেশি। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে আবদুল্লাহর স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। গতবার নির্বাচনের সময় স্ত্রীর নামে ব্যবসা থেকে ২০ লাখ টাকা আয় দেখালেও এবার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ টাকায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জ্যাকবের হাতে নগদ টাকা ছিল ৫ লাখের কম। তবে স্ত্রীর কাছে ছিল ৩০ লাখ সাড়ে ৩৮ হাজার টাকা। এবার তার হাতে নগদ আছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তবে স্ত্রীর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে। ১৫ বছর আগে তাঁর কাছে অস্থাবর সম্পদ বলতে ২০ ভরি সোনার বাইরে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫৮ টাকা ছিল। এখন তাঁর কাছে ৬০ ভরি সোনা ছাড়াও ১৬ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকার সম্পদ আছে। অর্থাৎ স্বর্ণালংকার ছাড়াই ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৭৬ গুণের বেশি।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যের স্থাবর সম্পদ বলতে পৈতৃক সূত্রে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট ও চরফ্যাশনে একটি বাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিন মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনের পর ওই ফ্ল্যাট-বাড়ি ছাড়াও ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৫ হাজার ১৭৪ টাকার স্থাবর সম্পদ বেড়েছে। এ সময়ে তাঁর নামে ৩০ একরের বেশি কৃষিজমি, একটি মাছের খামার, একটি কৃষি খামার ও একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র (রিসোর্ট) হয়েছে। পাঁচ বছর আগেও তাঁর কোনো রিসোর্ট ছিল না। কৃষিজমি ছিল প্রায় ১৭ একর। ওই ১৭ একর কৃষিজমির দাম ১ কোটি ১ লাখ টাকা দেখালেও এবার কৃষিজমি বে৩০ একর হয়েছে। কিন্তু দাম দেখিয়েছেন ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ কৃষিজমি ১৩ একর বাড়লেও দাম বেড়েছে মাত্র ২৫ লাখ।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় হলফনামায় স্ত্রীর কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেননি জ্যাকব। ২০১৩ সালেও তাঁর নামে কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না। কিন্তু ২০১৮ সালে স্ত্রীর নামে ১ কোটি ২ লাখ টাকা দামের ১ একর অকৃষিজমি ও প্রায় ৭৫ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মূলধন থাকার তথ্য দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ। এবার অকৃষিজমি ২ একর হলেও দাম দেখিয়েছেন মাত্র ২৪ লাখ। এ ছাড়া ৫ বছরে স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দামের নতুন ফ্ল্যাট হয়েছে।
২০১৮ সালে স্বর্ণালংকার, আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দাম ছাড়াই তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৩ টাকার। ৫ বছর পর তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫ টাকায়। গতবার স্ত্রীর ২৫ ভরি সোনা থাকার কথা উল্লেখ করলেও এবার উল্লেখ করেননি। সাবেক এই সংসদ সদস্য জ্যাকবের ঠিকাদারি, বালু ও বনের কাঠ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর হাতে।
চরফ্যাশন-মনপুরার সবকিছুরই নিয়ন্ত্রণ জ্যাকবের হাতে। মেঘনা নদীর ১৫টি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করছেন তাঁরই লোকজন। ১২টি ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। নদীর বুকে নেমেছে ২০টি বাল্কহেড। আয়তন অনুযায়ী একেকটি বাল্কহেডে ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনফুট বালুর ধারণক্ষমতা। বেতুয়াসহ চরফ্যাশন উপজেলার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বিভিন্ন পয়েন্টে বালু বিক্রি হচ্ছে। জ্যাকবের লোক হিসেবে পরিচিত তাজুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, আকতার হোসেন, নাসির, নোমান, মনির ও বেলালের তদারকিতে চলছে বালু উত্তোলন। ঘনফুট দরে বালু বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আড়াই থেকে ৩ টাকা ফুট হিসেবে বালু কিনে বেশি লাভে বিক্রি করছে।
২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চরফ্যাসনে খাস মহল মসজিদ মিনার টাওয়ার প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন সৌদি আরবের মক্কা শরীফের আল্লামা শায়েখ আবদুল হাফিজ মক্কী। সৌদি আরব সরকার ও জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে হয় এ প্রকল্পটি। ২০১৫ সালে প্রকল্পের শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজ শেষ হতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ বছর। টাওয়ারটির নির্মাণকালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী ছিলেন জ্যাকব। নির্মাণ করতে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়। এর উচ্চতা ২২৫ ফুট। এক একর জমি উপর টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চরফ্যাশন পৌরসভা। প্রকল্পটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল আর্কিটেক্ট ফোরাম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে ইউনুছ-আল মামুন জয়েন্ট ভেঞ্চার সরকার স্টিল। দু’টি প্রতিষ্ঠানই জ্যাকবের ঘনিষ্ঠ। নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রকল্পটির উদ্বোধন হয়। খাস মহল মসজিদ মিনার টাওয়ারের নাম হয়ে যায় জ্যাকব টাওয়ার।
ভিন্নমত পোষণ করলেই জ্যাকবের আক্রোশের শিকার হতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগে যোগ না দেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আ: রাজ্জাককে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সে সময়কার দায়ীত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বহু সংখ্যক খুনের ঘটনা দেখেছি রাজ্জাক খুনের মতো এতটা লোমহর্ষক, নির্মম খুনের ঘটনা আর কখনো দেখি নি। এ কথা বলে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন। রাজ্জাক খুনের মূল মাস্টার মাইন্ড হিসেবে জ্যাকবকে মনে করছেন চরফ্যাশনের অধিকাংশ সচেতন মানুষ।জ্যাকব তার নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থাকার পর ঈদের আমেজের মধ্যে একটি খুনের ঘটনা কিভাবে ঘটে এ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ ছাড়া রাজ্জাকের লাশ ভোলা সদর থানা থেকে ছাড় করা থেকে জানাজা-দাফন পর্যন্ত নানা নাটকীয়তার পেছনে জ্যাকবের স্পষ্ট হাত ছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু খুন করেই ক্ষ্যান্ত হননি সন্ত্রাসীরা। তারা নিহত রাজ্জাকের জানাজা পর্যন্ত পড়াতেও বাধা দেন। জ্যাকবের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসীরা জানাজায় আসা মানুষকে মারধরও করেছিল। এরপর হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল রাজ্জাকের বাড়িঘর। নিহত রাজ্জাকের বাবা হোসেন আহম্মেদ চরফ্যাশন উপজেলার থানায় মামলা দায়ের করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত ওই পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন।
বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে নিহত রাজ্জাকের বাড়িতে গেলে এমনই অভিযোগ করেন তার ছোট ভাই মো: আলামিন। তিনি বলেন, আমার ভাইর অপরাধ ছিল ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে যোগ দেননি। জ্যাকব নিজে আমার ভাইকে ছাত্রদল ছেড়ে ছাত্রলীগে যোগ দিতে বলেন। এতে আমার ভাই রাজ্জাক রাজি না হওয়ায় আমাদের পুরো পরিবারের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।
আলামিন আরো বলেন, আমি প্রায় ৯ বছর পর নিজ এলাকায় এসেছি। এখনো যেন অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে নিহত রাজ্জাকের পরিবারে। রাজ্জাকের বোন সালমা বেগম ও ভাই আলামিন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে দেখে বোন সালমা আলামিনকে প্রশ্ন করে বলে উঠেন, তুই কি এখন বাসায় আসবি? সরেজমিনে ওই বাড়িতে এখনো হামলার চিহ্ন পাওয়া গেছে। দেখা গেছে দরজা-জানালা ভাংচুরের ক্ষত।
জ্যাকব বাহিনীর হামলা থেকে রক্ষা পাননি স্থানীয় সাংবাদিকরাও । ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে আমাদের সময় পত্রিকার সাবেক চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধি আদিত্য জাহিদের ওপর হামলা চালিয়েছে জ্যাকব বাহিনী।
আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত খামারবাড়িতে প্রবেশ আপাততঃ বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকালে সেই খামারবাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর প্রধান ফটকের তালা খুলে দেন খামারবাড়ির দায়িত্বরত কেয়ারটেকার মো. শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব খামারবাড়ি বন্ধ করে দিতে বলেছেন। সেই থেকে খামারবাড়িটিতে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এ কারনে কোন দর্শনার্থীদের প্রবেশ করানো হচ্ছে না।
স্থানীয় জমি মালিকদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে তাদের জমিতে খামারবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই খামারবাড়িতে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের আসর জমানো হতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।এই খামার বাড়ীর নামে তিনি ইউসিবিএল চরফ্যাশন শাখা থেকে ৠণ গ্রহণ করেছেন, তা তিনি তার নির্বাচনী হলফমায় উল্লেখ করেন নি।
ইতিপূর্বে কয়েকটি পত্রিকায় জ্যাকবকে দূর্নীতির বরপূত্র অভিহিত করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। জ্যাকবের তক. বিগত পনের বছরে অর্জিত সম্পদ সমূহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বাস্তব চিত্র সে সব সংবাদে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছিলো। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জ্যাকবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে অভিযোগ জমা হয়। সে সব অভিযোগ অনুসন্ধানও করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জ্যাকবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে বিপুল অংকের টাকা খরচ করেছেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে আরও দু’টি অভিযোগ জমা হয়েছে দুদকে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে বলে জানা গেছে। আয়কর নথি ও নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদের বাইরে জ্যাকবের বেনামি সম্পদ কোথায় আছে, কার কাছে আছে, এবং বিদেশে কোন কোন দেশে, কি পরিমান অর্থ পাচার করেছে তাও খতিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছেন তার নির্বাচনী এলাকার সচেতন মানুষ।
এদিকে, সম্প্রতি সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব গ্রেপ্তার হওয়ার পর চরফ্যাশন উপজেলায় রাজ্জাক হত্যার বিচারের দাবীতে জ্যাকবের ফাঁসির চেয়ে মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
অনুসন্ধান চলাকালে এ সকল বিষয়ে জ্যাকবের সাথে কথা বলতে বার বার করলেও তিনি মোবাইল খোলা থাকলেও কল রিসিভ করেন নি।
উল্লেখ্য, রাজধানীর গুলশান থেকে জ্যাকবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান।



  
  সর্বশেষ
রসায়নে নোবেল পেলেন গুগলের দুই বিজ্ঞানীসহ ৩ জন
সম্পদের নেশায় মজে থাকা পুলিশের ডিআইজি জামিল
শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে জাতীয় নাগরিক কমিটির অভিযোগ
দুর্বল ৪ ব্যাংক পেলো ৯৪৫ কোটি টাকা

প্রধান সম্পাদক: এনায়েত ফেরদৌস , অনলাইন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত ) কামরুজ্জামান মিল্টন |
নির্বাহী সম্পাদক: এস এম আবুল হাসান
সম্পাদক জাকির হোসেন কর্তৃক ২ আরকে মিশন রোড ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত ও বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত। সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ২/২, ইডেন কমপ্লেক্স (৪র্থ তলা) সার্কুলার রোড, ঢাকা ১০০০। ফোন: ০১৭২৭২০৮১৩৮, ০১৪০২০৩৮১৮৭ , ০১৫৫৮০১১২৭৫, ই-মেইল:bortomandin@gmail.com