বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে খুলনায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী তারুণ্যকেন্দ্রিক কর্মসূচি। দেশের তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার, ভবিষ্যৎ ভাবনা এবং মৌলিক চাহিদা নিয়ে মতামত প্রকাশের সুযোগ তৈরি করতে এ আয়োজনকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। কর্মসূচির প্রথম দিন ১৬ মে শুক্রবার খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। দ্বিতীয় দিন ১৭ মে শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’, খুলনার ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানে।
এই কর্মসূচিতে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের তরুণ নেতাকর্মী, ছাত্র, যুবক, স্বেচ্ছাসেবক এবং সাধারণ অংশগ্রহণকারীরা অংশ নিচ্ছেন, যাদের অনেকেই সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নন। তাদের মধ্যে রয়েছে চাকরিপ্রার্থী, শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা, চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদ ও পেশাজীবী তরুণরা। সেমিনার ও সমাবেশের মাধ্যমে তাদের ভাবনা, প্রত্যাশা ও প্রস্তাব তুলে ধরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবারের সেমিনারে আলোচক হিসেবে অংশ নেন ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ডা. আজিজুল হক (মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলিনা, যুক্তরাষ্ট্র), ফাহিম মাশরুর (প্রতিষ্ঠাতা, বিডিজবস), ডা. মারুফ মল্লিক (রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ডিডব্লিউ একাডেমি, জার্মানি), রেজাউল করিম রনি (চিন্তক ও সম্পাদক, জবান), ডা. সায়েম মোহাম্মদ (এএমজেড হাসপাতাল), ডা. সাইফুল ইসলাম খন্দকার (অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা), শাহীর চৌধুরী (প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, শিখো), ডা. শামীমা সুলতানা (অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), ও ডা. তৌফিক জোয়ার্দার (ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর)। তারা সবাই তারুণ্যের ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, কৃষি ও পরিবেশ নিয়ে বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত হাজারো তরুণ-তরুণী। মূলত গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি তরুণদের উদ্বুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে আয়োজক সংগঠনগুলো।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এই সমাবেশ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এটি কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং একটি প্রজন্মের সঙ্গে দলীয় সংলাপের প্রক্রিয়া। তাদের বক্তব্য, তরুণরা হচ্ছেন আগামী দিনের নেতৃত্বের মূল চালিকাশক্তি এবং তাদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক কাঠামোয় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সারাদেশে মাসব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে প্রথম পর্ব শেষে এখন চলছে খুলনা-বরিশাল পর্ব। অনুষ্ঠানের শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনারও আয়োজন রয়েছে। নেতারা মনে করছেন, এই সমাবেশ থেকে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হবে এবং তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার হবে।
সমাবেশটি প্রথমে জিয়া হল চত্বরে করার পরিকল্পনা থাকলেও বৃহৎ জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে স্থানান্তর করা হয় সার্কিট হাউজ ময়দানে। আয়োজকদের অনুমান, এখানে প্রায় দুই-তিন লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে। যাতে নগরবাসীর দুর্ভোগ না বাড়ে, সেজন্য এই স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে শহরে মাইকিং, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই আয়োজন তরুণদের স্বপ্ন ও রাজনৈতিক অধিকার বাস্তবায়নের দাবিকে দৃঢ়ভাবে সামনে আনছে এবং গণতন্ত্র, মানবিকতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে একটি আধুনিক বাংলাদেশের পথে তরুণদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।